Abu Bakar Siddique

হাসপাতালের জীবন

দিনলিপি

হাসপাতালের জীবন খুবই দুর্বিষহ। সুস্থ কিম্বা অসুস্থ—দুই শ্রেণীর মানুষের কাছেই বিরক্তিকর একটা জায়গা হলো হাসপাতাল। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে, সরকারি হাসপাতাল।  বোধকরি স্বেচ্ছায় কেউ এখানে থাকতে চাইবে না। অন্তত কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে দিনের পর দিন এখানে অবস্থান করা তো বিলকুল অসম্ভব। 

এইযে এখন আমি বসে আছি ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনের চারতলায়। পরিচিত একজনের সাথে এসেছি। তার দাদাকে এখানে ভর্তি করানো হয়েছে। সিট পেয়েছে নতুন ভবনের পাঁচতলায়, ৫০২ নং ওয়ার্ডে। শুরুতে তার সাথে পাঁচতলায় গেলাম। তারপর আমাকে বলা হলো ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষা করতে। কিন্তু যেই পরিস্থিতি! সেখানে একমুহূর্ত থাকলেও বোধকরি দমবন্ধ হয়ে যাবে। এতো শোরগোল, হৈ-হল্লা? এটা হাসপাতাল নাকি মাছের বাজার—ঠাওর করতে কষ্ট হচ্ছিলো। 

ভাগ্যিস উপরওয়ালা করুণা করেছিলেন। তাইতো এখনো কোনো সরকারি হাসপাতালে রাত্রিযাপন করতে হয়নি। আমার যে অভ্যাস, আমি একদমই টিকতে পারতাম না। তার উপর খাবারের সমস্যা। বাথরুমগুলো তো জগতের অপরিচ্ছন্ন। দুর্গন্ধের কারণে তার পাশ দিয়েও চলা দায়। মানুষ কিভাবে যে ব্যবহার করে—ভেবে হয়রান হই।

অথচ চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। মানুষের এই অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেখানে সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা বেশ শোচনীয়। নিয়মশৃঙ্খলার কোনো বালাই নেই। তথ্যকেন্দ্রে কয়েকটা ফাঁকা চেয়ার পড়ে আছে। হাসপাতালের ফ্যানগুলোও যেন ঘুরছে বহুকষ্টে। যেখানে সেখানে দালালদের দৌরাত্ম্য। ফেলো কড়ি, মাখো তেল—এই নীতিতে চলছে সবকিছু। যাদের টাকাপয়সা আছে তারা কেউই সরকারি হাসপাতালের চৌকাঠ মাড়ায় না। তারা চলে যায় বড় বড় প্রাইভেট হাসপাতালে। যারা খুব বেশিই ধনী তারা চলে যায় দেশের বাইরে। উন্নত চিকিৎসার আশায়। তারা জানে, দেশে থেকে কিচ্ছু হবে না। 

রইলো বাকি মধ্যবিত্ত আর গরিব সমাজ। এরা অসুখ-বিসুখ হলে ছুটে আসে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। একটু কম খরচে যাতে চিকিৎসা করানো যায়। সেই তাদেরকেই লুটেপুটে খায় এই দালালচক্র। প্রতিদিন কত মানুষ যে এদের খপ্পরে পড়ে টাকাপয়সা গচ্চা দেয়! এমনও শুনেছি, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছে চিকিৎসা করাতে। গ্রামবাংলার সহজসরল মানুষ। অতকিছু বোঝে না। তাদেরকে ভুলভাল বুঝিয়ে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়ে গায়েব। দায়িত্বরত আনসারদেরকে বিষয়টা জানানো হলে উল্টো তাদেরকেই বকাঝকা করেছে। অথচ পুরো এরিয়া দালালমুক্ত করার দায়িত্ব তাদেরই। কেউ যাতে কাউকে ঠকাতে না পারে সেটা দেখার দায়িত্বও তাদের। কিন্তু তারা এক্ষেত্রে পুরো উদাসীন। উল্টো দালালচক্রের সাথে এদের সুগভীর সম্পর্ক আছে। 

এই হলো আমার সোনার বাংলার করুণ চিত্র..!

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

লিখেছেন : 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার সম্পর্কে

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit.

গ্যালারি

আমাকে অনুসরণ করুন