Abu Bakar Siddique

প্রথমবার ভারত ভ্রমণের আদ্যোপান্ত – তৃতীয় পর্ব

বিদেশ ভ্রমণ

৯ম দিন

সকাল সকাল আমরা নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম কাশ্মীর ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে। ইচ্ছে ছিলো পুরোটা ঘুরে দেখবো। কিন্তু ফরেনার বলে ইউনিভার্সিটির সিকিউরিটি গার্ডরা আমাদেরকে ঢুকতে দিলো না। অনেকবার রিকোয়েস্ট করার পরেও যখন কাজ হলো না, তখন আমরা সেখান থেকে চলে আসলাম। ইউনিভার্সিটির পাশেই হযরতবাল দরগাহ। আমরা হাঁটতে হাঁটতে সেদিকে গেলাম। মসজিদটাও বেশ নান্দনিক। আমরা চত্বরে বসে খানিকটা সময় রোদ পোহালাম। তারপর দরগাস-সংলগ্ন ঘাটে গিয়ে একটা স্পিডবোট ভাড়া করে চলে গেলাম চারচিনারে। অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা। ছবি তোলার জন্য আদর্শ একটা জায়গা। সেখানেও প্রায় ১ ঘন্টা ছিলাম আমরা। তারপর আবার ফিরে আসি ঘাটে।

বিকেল প্রায় হয়ে এসেছে। সকালে ভরপেট খেয়ে বেরিয়েছিলাম বলে সারাদিন আর ক্ষুধা লাগেনি। আমরা হযরতবাল দরগাহ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে সিটি বাসে উঠে পড়ি। আমাদের এবারের গন্তব্য লালচক।

প্রতি রবিবারে লালচকে হাট বসে। লোকাল মানুষজন রাস্তায় বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে বসে। আমরা সেখান থেকে কিছু কেনাকাটা করে আবার ফিরে এলাম ডাললেক এরিয়ায়। একটা বাঙালি হোটেল থেকে রাতের খাবারটা সেরে নিলাম। তারপর গেস্ট হাউজে গিয়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে সোজা ঘুম। আগামীকাল খুব সকালে উঠতে হবে।

খরচ :

১. সকালের নাস্তা = ১৫০₹

২. ডাললেক থেকে কাশ্মীর ইউনিভার্সিটি = ৫০₹

৩. স্পিডবোটে চারচিনার যাওয়া-আসা = ১৩০₹

৪. দরগাহ থেকে লালচক = ৩০₹

৫. লালচক থেকে ডাললেক = ২৫₹

৬. গেস্ট হাউজ ভাড়া = ৩৪০₹

৭. রাতের খাবার = ২৩০₹

• মোট = ৯৫৫₹ (১,৩২৮৳)

১০ম দিন

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হোটেল থেকে চেক-আউট করে বাইরে গিয়ে একটা টং দোকানে হালকা নাস্তা সেরে নিলাম। তারপর জম্মুগামী সরকারি বাসের টিকেট কেটে রওনা দিলাম জম্মুর উদ্দেশ্যে।

এখানেও বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিলাম। পাহাড়ধ্বসের কারণে রাস্তা অনেকটা সময় ধরে বন্ধ ছিলো। আমরা তখন একটা টানেলের মধ্যে আটকে ছিলাম। প্রায় অনেকক্ষণ পর রাস্তা ঠিক হলে আমাদের বাস চলতে শুরু করলো। পথিমধ্যে এক জায়গায় যাত্রাবিরতি দিলো। তখন দুপুরের খাবারটা সেরে নিলাম। তারপর বাস আবার চলতে শুরু করলো।

এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। আমরা এখনো জম্মুতে পৌঁছুতে পারিনি। সন্ধ্যা ৭:১৫ মিনিটে আমাদের ট্রেন। কে জানে ট্রেনটা ধরতে পারবো কিনা? তবে শেষমেশ তেমন কিছু ঘটেনি। একেবারে শেষমুহুর্তে এসে ট্রেনটা ধরতে পেরেছিলাম। বিশাল বড় ট্রেন। নিজেদের বগি খুঁজে উঠে পড়লাম। একেবারে সঠিক সময়েই ট্রেন ছেড়ে দিলো। তাড়াহুড়ায় রাতের খাবার নিয়ে উঠতে ভুলে গিয়েছিলাম। যাহোক, কোনো ব্যাপার না। আমাদের এবারের গন্তব্য ভারতের রাজধানী দিল্লি।

খরচ :

১. সকালের নাস্তা = ২৫₹

২. শ্রীনগর থেকে জম্মু = ৮৩০₹

৩. দুপুরের খাবার = ১৩০₹

৪. ট্রেনের টিকেট (জম্মু-দিল্লি) = ৭৫৫₹

• মোট = ১,৭৪০₹ (২,৪১৮৳)

১১তম দিন

রাত তিনটার দিকে ট্রেন আমাদেরকে নামিয়ে দিলো পুরনো দিল্লি স্টেশনে। সেখান থেকে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে আমরা চলে গেলাম নিউ দিল্লি এরিয়ায়। সেখানে নেমেই সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। যদিও তখন শেষ রাত। তারপর অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা হোটেল পেলাম। সেখানে চেক-ইন করে ব্যাগপত্র রেখে ফ্রেশ হলাম। তারপর হালকা ঘুম। শরীরটা বেশ ক্লান্ত ছিলো। সেটা চলে গেলো এই ছোট্ট একটা ঘুমে। আমরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে দিল্লি ভ্রমণে বেরিয়ে পড়লাম।

দিল্লি নিয়ে আমাদের কোনো প্ল্যানিং ছিলো না। শুরুতেই চলে গেলাম হোটেলের নিকটবর্তী (রামকৃষ্ণ আশ্রম) মেট্রো স্টেশনে। টিকেট কেটে চলে গেলাম কারলবাগে। সেখানকার ফেমাস পাস্তা চেখে দেখলাম। তারপর কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আবার চলে আসলাম মেট্রো স্টেশনে। এবার টিকেট নিলাম চাঁদনীচকের। সেখানে নেমে রীতিমতো ‘থ’ বনে গেলাম মানুষ দেখে। এতো এতো মানুষ! আমরা ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম দিল্লির বিখ্যাত লালকেল্লায়। সেখানটায় ঘুরেফিরে আমরা গেলাম বিখ্যাত জামে মসজিদে। সেখানেও বেশ ভিড় ছিলো। মসজিদটা ঘুরে দেখে আমরা গেলাম মসজিদের  (খুবসম্ভবত) দক্ষিণ দিকে মতিয়া মহল রোডে। সেখানকার বিখ্যাত হাজি মোহাম্মদ হোসাইন সাহেবের চিকেন ফ্রাই চেখে দেখলাম। সাথে ছিলো রুমালি রুটি। খাবারের টেবিলে একজন ভারতীয় ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। তিনি সেখানকার একজন লোকাল। পেশায় ডাক্তার। আমাদেরকে তিনি তার চেম্বারে যাওয়ার দাওয়াত দিলেন। এবং রাতে উনার বাসায় মেহমান হতে বললেন। সেইসাথে আমাদের খাবারের বিলটাও তিনি দিয়ে দিলেন। আমাদেরকে বিল দিতেই দিলেন না। যাহোক, এমন আন্তরিক মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে বেশ ভালোই লাগলো।

দুপুরের খাবারের পর্ব শেষ। এবার আমরা সেই ফেমাস শরবত-ই-মোহাব্বতের দোকানে গেলাম। জিনিসটা আসলেই সুস্বাদু। একেবারে পয়সা উসুল বলা যায়।

এরপর আমরা আবার গেলাম চাঁদনীচকে। সেখান থেকে বেশকিছু কেনাকাটা করে আমরা চলে গেলাম মেট্রো স্টেশনে। সেখান থেকে মেট্রোতে চেপে চলে গেলাম আমাদের হোটেল এরিয়ায়। সারাদিনে ভালোই কেনাকাটা হলো। সেগুলো হোটেলে রেখে আবার বের হলাম। রাতের দিল্লি শহরটা ঘুরে দেখছিলাম। সেই সাথে সেখানকার স্ট্রিটফুডগুলোও চেখে দেখছিলাম। তারপর রাত দশটার দিকে আবার হোটেলে ফিরে আসলাম।

খরচ :

১. স্টেশন থেকে নিউ দিল্লি = ৪০₹

২. সকালের নাস্তা = ৭০₹

৩. হোটেল ভাড়া = ২৬৬₹

৪. মেট্রোরেল (রামকৃষ্ণ আশ্রম-কারলবাগ) = ২০₹

৫. হালকা খাবার-দাবার = ১০০₹

৬. মেট্রোরেল (কারলবাগ-চাঁদনীচক) = ৩০₹

৭. শরবত-ই-মোহাব্বত = ৪০₹

৮. জামে মসজিদ থেকে চাঁদনীচক = ১৫₹

৯. মেট্রোরেল (চাঁদনীচক-রামকৃষ্ণ আশ্রম) = ৩০₹

১০. রাতের ঘোরাঘুরি এবং খানাপিনা = ১৫০₹

• মোট = ৭৬১₹ (১,০৫৮৳)

১২তম দিন

রাতেই আমরা ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে গিয়ে নাস্তাটা সেরে নিলাম। তারপর হোটেল থেকে চেক আউট করে ফেললাম। বাইরে এসে একটা সিএনজি নিয়ে সোজা চলে গেলাম শিবাজি স্টেডিয়াম। সেখান থেকে সরাসরি এয়ারপোর্টগামী মেট্রোতে চেপে চলে গেলাম টার্মিনাল ৩-এ। ভারতের সবচে’ দ্রুতগতির মেট্রোতে উঠে বেশ রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছিলো। যদ্দুর শুনলাম, ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে ছোটে এই মেট্রো। শুনেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।

এয়ারপোর্ট পৌঁছেই বোর্ডিং পাস নিয়ে নিলাম। তারপর ইমিগ্রেশন পেরিয়ে চলে গেলাম আমাদের নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানে গিয়ে প্লেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। এখানে আরও কিছু বলে রাখি—আপনারা অবশ্যই ফ্লাইটের সময়ের ৪ ঘন্টা আগে দিল্লি এয়ারপোর্টে চলে আসবেন। কারণ এয়ারপোর্টটা বিশাল বড়। সব কার্যক্রম শেষ হতে বেশ খানিকটা সময়ও লেগে যায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব এয়ারপোর্টে চলে আসবেন।

সাড়ে বারোটার একটু পরে প্লেন ছাড়লো। প্রায় আড়াই ঘন্টার জার্নি শেষে আমরা পৌঁছে গেলাম নিজের দেশে।

খরচ :

১. সকালের নাস্তা = ৫০₹

২. হোটেল থেকে এয়ারপোর্ট মেট্রো স্টেশন = ৫০₹

৩. মেট্রোরেল (শি. স্টেডিয়াম-এয়ারপোর্ট) = ৫০₹

৪. প্লেনের টিকেট (দিল্লি-ঢাকা) = ৪,৬০৫₹

৫. এয়ারপোর্টে হালকা খানাপিনা = ৬০₹

• মোট = ৪,৮১৫₹ (৬,৬৯৩৳)

___________

১ম দিন = ৮৪৫₹ (১,১৭৫৳)

২য় দিন = ৮১৫₹ (১,১৩৩৳)

৩য় দিন = ২,৯১০₹ (৪,০৪৫৳)

৪র্থ দিন = ৪২৫₹ (৫৯০৳)

৫ম দিন = ১,১২০₹ (১,৫৫৬৳)

৬ষ্ঠ দিন = ৩,০৫৬₹ (৪,২৪৮৳)

৭ম দিন = ১,৫১০₹ (২,০৯৮৳)

৮ম দিন = ৭৭০₹ (১,০৭০৳)

৯ম দিন = ৯৫৫₹ (১,৩২৮৳)

১০ম দিন = ১,৭৪০₹ (২,৪১৮৳)

১১তম দিন = ৭৬১₹ (১,০৫৮৳)

১২তম দিন = ৪,৮১৫₹ (৬,৬৯৩৳)

• মোট খরচ = ১৯,৭২২₹ (২৭,৪১২৳)

***

সাথে যুক্ত হবে প্রথমদিনের (ঢাকা-বেনাপোল বর্ডার) ১,৫৭০৳। তাহলে মোট খরচটা দাঁড়ায় ২৮,৯৮২৳। এটাই আমাদের পুরো ট্রিপের জনপ্রতি খরচ। এছাড়াও পার্সোনাল কেনাকাটা করতে গিয়ে খরচ হয়েছে। সেগুলো যার যার ব্যক্তিগত খরচ। মূল হিসাবে যুক্ত হবে না।

লিখেছেন : 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার সম্পর্কে

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit.

গ্যালারি

আমাকে অনুসরণ করুন