আবদুল মোত্তালিব বললেন, আপনার সৈন্যরা আমার দুশো উট লুট করেছে। আমি উট ফেরত চাই। আবরাহা বললেন, আমি আপনাদের উপাসনালয় ধ্বংস করতে এসেছি, অথচ আপনি সামান্য উট নিয়ে চিন্তিত। কেমন নেতা আপনি! আবদুল মোত্তালিব বললেন, আমি উটের মালিক, তাই আমার চিন্তা উট নিয়ে। কাবাঘরের যিনি মালিক, তিনি তার ঘর সামলাবেন।
গত কয়েকদিন ধরে একটি বই পড়ছিলাম। পিতামহ নামের এই বইটি লিখেছেন আমাদের সকলের পরিচিতমুখ সাব্বির জাদিদ ভাই। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রদ্ধেয় দাদাজানকে নিয়ে রচিত হয়েছে বইটি। গতবছর বেশ কয়েকজনের মুখে শুনেছিলাম বইটির কথা। তাই বইমেলা থেকে একটি কপি সংগ্রহ করেছিলাম।
নবিজির দাদাজানকে নিয়ে রচিত স্বতন্ত্র কোনো বই আছে কিনা—আমার জানা নেই। আমার দেখা এটাই প্রথম। ছোটোবেলায় এই আবদুল মোত্তালিবের কাহিনি কত যে শুনেছি! কত সিরাতের বইয়ে যে পড়েছি তার ঘটনা—হিসাব নেই। তাই মনের অজান্তেই তার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে পড়েছিলাম, যেমনটা আগ্রহী হয়েছিলাম প্রিয়নবীর ব্যাপারে। তার জীবনের আদ্যোপান্ত জানতে যেন তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো ছটফট করছিলাম এতদিন।
অবশেষে যখন বইটির সন্ধান পাই তখন ভেবেছিলাম, এবার বোধহয় তৃষ্ণার্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো। কিন্তু হায়! বইটি যে আমার তৃষ্ণা আরও বাড়িয়ে দিলো। আমাকে বুঝিয়ে দিলো, তোমাকে আরও জানতে হবে। এখনো অনেককিছুই জানার বাকি তোমার। অতএব—পড়ো, পড়ো এবং পড়ো।
এ বইটি যদিও আবদুল মোত্তালিবকে নিয়ে লেখা—কিন্তু পুরো বইয়ে আমি অন্য একটি চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি। চরিত্রটির নাম ‘তালহা’। বইয়ের শুরু এবং শেষ বলতে সে-ই। পুরো বইজুড়ে শুধু তারই আলোচনা। মনে হচ্ছিল, সে যেন গুরুত্বপূর্ণ কেউ। ইতিহাসের পাতায় হয়তো তার নামটি গেঁথে আছে কোনোভাবে। হয়তো সে তার কাঙ্ক্ষিত মহামানবের দেখা পেয়েছিল। তার সান্নিধ্যে নিজেকে সঁপে দিয়ে সে পরিণত হয়েছিল সোনার মানুষে। কিন্তু আফসোস! নবিজির জন্মের মাধ্যমে লেখক তার বইয়ের ইতি টেনেছেন। শেষে তালহার পরিণতি কী হয় সেটা জানার জন্যে বেশ উদগ্রীব ছিলাম। কিন্তু লেখকের কলম ততদূর পর্যন্ত যায়নি। এর আগেই থেমে গিয়েছে। তাই একজন পাঠক হিসেবে আমাকেও থামতে হলো বাধ্য হয়ে।
বইটি আমার দারুণ লেগেছে। পড়তে পড়তে যেন আমি ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম মরুর রাজ্যে। মরুর বিভীষিকাময় চোরাবালি থেকে টেনে বের করছিলাম ইতিহাসের ফল্গুধারা। মাঝে মাঝে আবার হারিয়ে যাচ্ছিলাম মরুর সমুদ্রে। তীব্র লু-হাওয়া এসে আমার সারাটা শরীর যেন ঝলসে দিচ্ছিল।
আমি চলে গিয়েছিলাম ইয়েমেনে। সেখানকার বিখ্যাত মাআরিব-বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে যেন পুরো এলাকার সৌন্দর্য অবলোকন করছিলাম। শুনতে পাচ্ছিলাম বাঁধের ভেতর ইঁদুরের মাটি সরানোর শব্দ। একটা সময় আমার সামনেই যেন ধ্বসে গেল জগদ্বিখ্যাত সেই বাঁধ।
আমি আবু কুবাইস পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আবরাহার আগমনের অপেক্ষায় তটস্থ কুরাইশ জাতিকে দেখছিলাম। শুনতে পাচ্ছিলাম ওদের ফরিয়াদ। আমি যেন দেখতে পাচ্ছিলাম আগেরদিনের দৃশ্য—কাবার চত্বরে দাঁড়ানো আবদুল মোত্তালিবের করুণ সে ফরিয়াদ।
ব্যস, আর কিছু বলবো না। তবে হ্যাঁ, বইয়ের পুরোটা অংশই যে পাঠকের ভালোলাগবে—এমনটা কিন্তু নয়। এটা যে কোনো বইয়ের ক্ষেত্রেই। এমন বই খুব কমই আছে যেগুলো শুরু থেকে শেষ অব্দি পাঠককে মুগ্ধ করে। তাই একটু এদিক-সেদিক হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বই : পিতামহ
লেখক : সাব্বির জাদিদ
প্রকাশনী : ঐতিহ্য
২ Responses
পিতামহ পড়েছি করোনাকালে। স্বাদ এখনো যেন জিহ্বায় লেগে আছে। রিভিউ ভালো লাগল। তাই ‘পরিজাদ’ পড়ার ‘দাওয়াত’ দিচ্ছি আপনাকে। পড়াশেষে ভালো-খারাপ মন্তব্যও প্রত্যাশা করি। আশাকরি জার্নিটা ভালো হবে।
ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার অনূদিত বই ‘পরিজাদ’ পড়েছি। রিভিউও লিখেছিলাম মনে হয়। কিন্তু সেই ফাইলটা খুঁজে পাচ্ছি না। পেলে শীঘ্রই আপলোড করবো ইনশাআল্লাহ।