Abu Bakar Siddique

সুলতান মালিকশাহ সেলজুকি

বুক-রিভিউ

সেলজুক সাম্রাজ্য, সুলতান মালিকশাহ এবং খাজা নিজামুল মুলক—এসব ব্যাপারে আমি প্রথম জেনেছিলাম ২০১৫ কিম্বা ২০১৬ সালে। বিখ্যাত উপন্যাসিক ‘এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ’-এর শয়তানের বেহেশত বইটা পড়েই মূলত এসব জানতে পারি। তবে সেই জানার ফলে মনের মাঝে কেমন যেন একপ্রকারের তৃষ্ণা অনুভূত হয়েছিল—যা তখন আমাকে বেশ পীড়া দিচ্ছিল।

আমি তখনও প্রকাশনা জগতের সাথে পরিচিত হইনি। এলাকার ছোটখাটো দুয়েকটা লাইব্রেরিই ছিল আমার বই তালাশের স্থান। প্রায়ই সেখানে গিয়ে খোঁজ করতাম—সেলজুক সাম্রাজ্য নিয়ে কোন বই এলো কি-না? তবে দুর্ভাগ্য আমার! প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরতে হতো।

এখন আল্লাহর রহমতে প্রকাশনা জগতের সাথে পরিচিত হয়েছি। যেকোনো বইয়ের বিষয়ে আমি তাদের বিরক্ত করি। কোন বইয়ের প্রয়োজন হলে সরাসরি তাদেরকেই নক করি। তাই এখন আর তেমন নিরাশ হতে হয় না।

গত কয়েকমাস আগেই জানতে পারি, সেলজুক সাম্রাজ্য নিয়ে দুটি বই প্রকাশ করবে কালান্তর প্রকাশনী। আমার মনটা যেন খুশিতে নেচে নেচে উঠছিল এটা শুনে। আর তাছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে কালান্তর প্রকাশনীর সাথে আমার সম্পর্ক বেশ ভালো। তাই আমি আর দেরি না করে আগেভাগেই তাদেরকে বলে রাখি আমার জন্য দুটো বই-ই এক কপি করে রেখে দিতে।

বই দুটি প্রকাশিত হলো। তবে লকডাউনের কারণে বেশ দেরি হলো বইগুলো পেতে।

যাহোক বইতো হাতে পেলাম। এবার পড়ার পালা। কোনটা দিয়ে শুরু করব—এনিয়ে শুরুতে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলাম। তবে শেষমেশ ঠিক করলাম, যেহেতু ‘সুলতান মালিকশাহ’ বইটি ছোট তাই সেটি আগে পড়বো।

পড়া শুরু করলাম। প্রখ্যাত উপন্যাসিক আসলাম রাহির লেখা বইটি অনুবাদ করেছেন দাদা আব্দুর রশীদ তারাপাশী। আমি আগে থেকেই দাদার লেখার বেশ ভক্ত। উনার লেখা পড়তে আমার বরাবরই ভালো লাগে। সেই ধারাবাহিকতায় এ বইটিও মন্দ লাগেনি। তবে এই বইয়ে আমি উনার লেখার নতুন কিছু দিক লক্ষ্য করেছি। যেগুলোর কিছু কিছু আমার বেশ লেগেছে আর কিছু কিছুতে আমার মনে হয়েছে—এগুলো সমালোচনার যোগ্য।

যেগুলো ভালো লেগেছে :

উপমাবাচক বাক্যগুলো। যেগুলোতে অনুবাদক তার মুনশিয়ানা ফুটিয়ে তুলেছেন। এত সুন্দর করে তিনি উপমাগুলো দিয়েছেন—তা সত্যিই বড় চমৎকার! এছাড়াও সুন্দর উপস্থাপন সহ আরো বেশ কিছু দিক আমার বড্ড ভালো লেগেছে

সমালোচনা : 

[১] বইটিতে আমি ইতিহাস সংক্রান্ত কিছু ভুল লক্ষ্য করলাম। যেমন এক জায়গায় দেখলাম, সুলতান মালিক শাহের কমান্ডার আরসালান একটি পরিবারকে বুখারা ও সমরকন্দের ইতিহাস শোনাচ্ছেন। শোনানোর একপর্যায়ে তিনি চেঙ্গিস খান হালাকু খান এমনকি—তৈমুর লং এর কাহিনি পর্যন্ত বর্ণনা করলেন। অথচ তারা তার থেকে আরো দুই-তিন শতাব্দী পরের। তাদের কাহিনী তিনি কীভাবে শোনালেন—সেটাই আমার বোধগম্য হয়নি। এছাড়া আরও দুয়েক জায়গায় সনের ওলটপালট লক্ষ্য করেছি।

[২] সম্বোধনের ব্যবহার : এটা প্রায় অনেক স্থানেই লক্ষ্য করেছি। যেমন : ‘তোরা ভেবেছিলে’, ‘তোরা মনে করেছিলে’—এই ধরনের আরকি! অথচ যা কিনা আমি ভুল হিসেবেই জানি। তবে আমার জানার স্বল্পতা থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়।

ব্যস্ এটুকুই! এছাড়া বইটি এক কথায় অসাধারণ। বইটি পড়ে পাঠকমাত্রই তৃপ্ত হবেন বলে আমি মনে করি। আমি বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং ভবিষ্যতে কালান্তর প্রকাশনী পাঠকদেরকে আরো ভালো ভালো বই উপহার দিক—এটাই কামনা করি।

বই : সুলতান মালিকশাহ সেলজুকি 

মূল : আসলাম রাহি 

ভাষান্তর : আবদুর রশীদ তারাপাশী  

প্রকাশনী : কালান্তর প্রকাশনী

লিখেছেন : 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার সম্পর্কে

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit.

গ্যালারি

আমাকে অনুসরণ করুন