সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া জয় বাংলা ম্যারাথন ২০২৪ এর একটা ইস্যু নিয়ে বেশ আলোচনা কিম্বা সমালোচনা হচ্ছে। সেটা হলো মেডেল। কেউ কেউ আক্ষেপ প্রকাশ করছেন এই বলে, ‘অনেকেই তো তিন চক্কর না দিয়ে কিম্বা কাট অফ টাইমের মধ্যে শেষ না করেও মেডেল পেয়েছে। এটা কি ঠিক হলো? এমনটা হলে তো আসল ফিনিশার আর নকল ফিনিশারের মধ্যে কোনো পার্থক্যই থাকলো না। মেডেলের তো তাহলে কোনো দামই রইলো না।’ ইত্যাদি। আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘মেডেল নিলে সমস্যা কী? এটা তো তার প্রাপ্য অধিকার।’
মোটকথা, এই ইস্যুটা নিয়ে আলাপ উঠার পরেই পক্ষে বিপক্ষে বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। তাই ভাবলাম, আমিও আমার মতামত ব্যক্ত করি। তাই আশা করবো পুরোটা পড়ে তারপর আপনারা মন্তব্য করবেন।
প্রথমেই যে বিষয়টা সেটা হচ্ছে, এই ইভেন্টের মেডেল ছিলো Participation মেডেল। ফিনিশার মেডেল না। তাই নিয়মানুযায়ী এই ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী সবাইকেই মেডেল দেওয়া হবে। এটা আগেই বলে দেওয়া ছিলো। তাই এটা নিয়ে আলাপ বাড়ানোর কোনো প্রয়োজনই মনে করছি না।
মেডেল কে পেলো না পেলো এসব নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। তবে আমার দুঃখটা হচ্ছে, সবার প্রাপ্তি সমান হয়ে যাওয়া নিয়ে। মনে করেন, একজন কষ্ট করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩ রাউন্ড দৌঁড় শেষ করে মেডেল নিলো। আরেকজন ২ রাউন্ড দিয়েই মেডেল নিলো। এখানে তাহলে পার্থক্য রইলো কোথায়? আরেকটা উদাহরণ দেই, মনে করেন আপনি একজায়গায় পরীক্ষা দিয়েছেন। সেখানে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর আপনি ঠিকঠাক দিয়েছেন। আরেকজন সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। তবুও সে আপনার সমান নাম্বার পেলো। আরেকজন তখন বললো, ‘সে যে পরীক্ষা দিতে এসেছে এটাই কি অনেক না? তাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যেই তো এমনটা করা হয়েছে।’ তখন আপনার কেমন লাগবে? আশাকরি বিষয়টা ভেবে দেখবেন।
এই বিষয়টাই আমি কয়েকজনের পোস্টে কমেন্ট করে বোঝাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা কী বুঝেছেন কে জানে? উল্টো আমাকেই দু-তিন কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। আমি নাকি রুলস পড়িনি। রুলস না পড়েই অংশগ্রহণ করেছি। আর এখন এসে হাউকাউ করছি। আপনাদের ধারণা কিম্বা চিন্তাভাবনা এমন কেন ভাই?
আমি আসলে বলতে চেয়েছি কিম্বা বোঝাতে চেয়েছি অন্য বিষয়। যারা মূল ফিনিশার, তাদেরকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যেতো। যেমন, প্রত্যেক রাউন্ড শেষ করলে রানারের হাতে একটা রিস্টব্যান্ড পরিয়ে দিতে পারতো (এছাড়াও অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতো)। যারা মূল ফিনিশার তাদেরকে আলাদা করা যেতো ওই রিস্টব্যান্ডের মাধ্যমে। এতে করে তাদেরও একটা ভালোলাগা কাজ করতো। নাহলে একজন রানার যখন দেখবে সে বেস্ট এফোর্ট দিয়ে যা পেয়েছে, অন্যজন তা না করেই সেটা পেয়েছে। তখন যে বেস্ট এফোর্ট দিয়েছে সে-ই বরং Demotivated হবে।
শুধু একপক্ষের বিষয় ভাবলেই হয় না। দু’পক্ষেরটাই ভাবতে হয়। আশাকরি ভেবে দেখবেন। সবকিছুই নিয়মমাফিক চলা ভালো। আর তাই তো এই ইভেন্টেও বেশকিছু নিয়মকানুন ছিলো। সেগুলো না মেনেও যদি কেউ পার পেয়ে যায়, আর আপনি তাকে উৎসাহ দেওয়ার নামে তার পক্ষপাত করেন তাহলে তো আপনিও অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্রয়দাতা। কারণ ভুল কিম্বা অন্যায় যে করে তার সমান অপরাধী যে তাকে প্রশ্রয় দেয়।
সবশেষে বলতে চাই, প্রতিটা রানারের এফোর্টকে আমি সম্মান করি। শ্রদ্ধা করি। কিন্তু যারা নিয়ম ভেঙে আবার বড়ো গলায় কথা বলে কিম্বা নিয়ম ভঙ্গকারীদের পক্ষে সাফাই গায়, তাদের জন্যই মূলত এই লেখাটা। সবাই ভালো থাকবেন। আর অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকবেন।
বিঃদ্রঃ এই লেখাটা সরাসরি কাউকে উদ্দেশ্য করে কিম্বা কাউকে হেয় করার জন্য লেখা হয়নি।
লেখার তারিখ : ১০ জুন, ২০২৪




