২০২৩ সালের এপ্রিল মাস। বিকেল চারটা বাজে। বিছানায় শুয়ে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না। ঘামে ভিজে যাচ্ছে বিছানা। মাথার উপরে একটা সিলিং ফ্যান সর্বশক্তিতে ঘুরছে। ফ্যানটা নতুন, তাই বেশ জোরেশোরেই ঘুরছে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। ঠাণ্ডা বাতাসের পরিবর্তে সে গরম বাতাস দিচ্ছে। সরাসরি ছাদের নিচে ঘর হওয়ায় অবস্থা বেজায় করুণ।
মোবাইল হাতে নিয়ে আমি রীতিমতো চমকে উঠলাম। আজকে আমাদের এদিককার (রাজশাহী) তাপমাত্রা ৪৩° সেলসিয়াস। চিন্তা করা যায়! তাপমাত্রা দেখেই আমার রোজা ধরে গেলো। এমনিতেই রোজা-রমজানের দিন, তারউপর এমন গরম। মাথা কাজ করছিলো না তখন। গরমে মনে হচ্ছিলো সব সেদ্ধ হয়ে যাবে। অগত্যা আমি পাশের ঘরে গিয়ে বসলাম। এই ঘরে এসি চলছে। রিমোটটা হাতে নিয়ে একেবারে ১৬ তে দিলাম। উঁহু, তবুও কোনো লাভ হচ্ছে না। গরম যদিও কমেছে খানিকটা। কিন্তু তারপরেও থাকা যাচ্ছে না।
কিছুক্ষণ পর আসরের আযান হলো। আমি মসজিদে গিয়ে আসর নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে ভাবছি, এখন কী করা যায়? বাসায় তো আর যাওয়া যাবে না। ইফতারের বাকি আরও প্রায় দেড় ঘন্টা। এতোটা সময় বাসার ভেতরে থাকলে দমবন্ধ হয়ে কিম্বা গরমে সেদ্ধ হয়ে অক্কালাভও করতে পারি। তারচেয়ে বরং শখের পঙ্খিরাজে চেপে খানিকটা বেড়িয়ে আসি। এটাই বরং ভালো হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। আমি বেড়িয়ে পড়লাম সাইকেল নিয়ে। এখনো রোদ পড়েনি। বাইরেও ভালোই গরম। জোরালো প্যাডেল মারছি যাতে করে একটু বাতাস লাগে শরীরে। কিন্তু এ কী! এগুলো বাতাস না অন্য কিছু? রীতিমতো ভড়কে গেলাম। বাতাস এমন গরম হবে তা তো কল্পনাও করিনি। আরেকটু সামনে গিয়ে হাইওয়েতে উঠলাম। বাড়িয়ে দিলাম সাইকেলের গতি। পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম, কাজটা ঠিক করিনি। আগে তো তাও গরম বাতাসেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু এখন তো চোখমুখ ঝলসে যাচ্ছে। বাতাসের সাথে সাথে কী যেন এসে চোখেমুখে বিঁধছে। অবস্থা এমন, চোখ খুলে সাইকেল চালাতে পারছিলাম না। এমতাবস্থায় মনে পড়ে গেলো, বইয়ে পড়া সেই ‘লু-হাওয়া’র কথা। গোটা শহর তখন আমার কাছে মরুভূমি ঠেকলো। সাইকেলটাকে মনে হলো কোনো দ্রুতগামী উট কিম্বা আরবি ত্যাজি ঘোড়া। আর নিজেকে মনে হলো গন্তব্যহীন কোনো বেদুইন মুসাফির।